উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২/০৩/২০২৫ ২:২৫ পিএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের খবর পুরোনো। প্রদেশটির ৯০-৯৫ শতাংশ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে বলে প্রচার হচ্ছে গত তিন মাস ধরে। কিন্তু সম্প্রতি আবারো সংঘর্ষ বাধে। এমন অনিশ্চিত সময়ে নিজেদের জীবন রক্ষায় সেখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে অর্ধলাখের বেশি রোহিঙ্গা নানাভাবে উখিয়া-টেকনাফে অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

শনিবার (১ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়া ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-৬৪) উদ্বোধনীতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।

বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) প্রশিক্ষণ মাঠে উদ্বোধন পরবর্তী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ বর্ডার নিরাপদ রয়েছে। আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটা কার হবে? মিয়ানমার না কি আরাকান আর্মির, তা বলা মুশকিল। সেজন্য বিজিবি উভয়পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। মিয়ানমার সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলাকালে চলমান সময় পর্যন্ত বাধার পরও অর্ধলাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে আরও চারটি ব্যাটালিয়ন যুক্ত হলো। এতে বিজিবির সক্ষমতা আরও বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আরও বাড়ানোর। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের বিজিবির সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক চলে আসে। রোহিঙ্গা সমস্যাতো রয়েই গেছে, মাদক চোরাচালান বন্ধে এখানে এই নতুন ব্যাটালিয়ন খুবই দরকার ছিল। আশা করি, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রয়োজনে আরও ব্যাটালিয়ন দরকার হলে ভবিষ্যতে করবো। তবুও বর্ডারে যেন নিরাপদ এবং মানুষ যেন শান্তিতে থাকে, সেটা আমরা করবো।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারে নিরাপত্তা প্রশ্নে আরাকান আর্মি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে তো সত্যিই একটা সমস্যা আছে। কারণ অন্য দেশ মিয়ানমার। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটা কার হবে? মিয়ানমার না কি আরাকান আর্মির- তা বলা মুশকিল। আমরা অফিসিয়ালি জানিও না। তাই আমাদের উভয় পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে হচ্ছে, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য। তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই।

রোহিঙ্গা ও মাদককে সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাধার পরও অর্ধলাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে। অনেক সময় মানবিক কারণে সেটা পারাও যায় না। সঙ্গে বিদেশিদের একটা প্রেসার আছে। এজন্য আমরাও তাদের সাহায্য সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। আর এটাও তো ঠিক যে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা।

তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ, সচেতন। এজন্য উপদেষ্টা সমমর্যাদার খলিলুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, নেগোসিয়েশনের চেষ্টা চলছে। আশা করি, সমস্যা দুটিই সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের বর্ডার কিন্তু অনেক নিরাপদ। ছোটখাটো একটা সমস্যা সব বর্ডারেই থাকে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিন্তু সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এটা কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই, কারণ অস্ত্রটাতো তারা ব্যবহার করছে। আপনারা যা চাচ্ছেন, আমিতো সেটা অফিসিয়ালি বলতে পারছি না।

এর আগে নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি), স্টেশন সদর দফতর, ঢাকা, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে অত্যন্ত গৌরবময় ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহসী অগ্রণী ভূমিকা মুক্তিকামী বাঙালিদের সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি সদস্য ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪ মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের স্মরণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ওপর ন্যস্ত। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা করা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচার সংক্রান্ত অপরাধসহ অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্র সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনকে সহায়তাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্য যেকোনো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে বিজিবির প্রতিটি সদস্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি বলেন, বিশেষভাবে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) সীমান্তে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন ও বিওপিগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যাটালিয়ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ আনুপাতিক অসামঞ্জস্যতা কিছুটা কমে আসবে। তাই আপনারা আরও ভালোভাবে দেশের সীমান্তে টহল ও নজরদারি করতে সক্ষম হবেন।

এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও মাদকের আগ্রাসন রোধে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সীমান্ত রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী-শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খলার সঙ্গে পালন করে বিজিবির সুনাম ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবেন। সুত্র: জাগোনিউজ

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনে অভিযান

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রুখতে মাঠে নেমেছেন উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। ...

উখিয়ার ওসি এলেন চকরিয়ায়

সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশের পর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। বদল হয়েছে ...